নিচের অনুচ্ছেদের কোনো কোনো জায়গায় প্রতিশব্দ হিসেবে কিছু বিকল্প শব্দ রয়েছে। এসব বিকল্প শব্দের মধ্যে যে কোনো একটি শব্দ ব্যবহার করে অনুচ্ছেদটি আবার লেখো। প্রয়োজনে ঐসব জায়গায় অন্য প্রতিশব্দও ব্যবহার করতে পারো।
মানুষ বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য/আহার গ্রহণ করে। কিন্তু বেঁচে থাকাই মানুষের একমাত্র লক্ষ্য/কাজ/উদ্দেশ্য নয়। প্রাণীজগতের অন্য প্রাণীও খাদ্যের খাবারের অন্বেষণে দিনের/জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় নষ্ট করে। এছাড়া প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য সবাইকেই নিরাপদ আশ্রয়ের/বাসস্থানের সন্ধান/খোঁজ করতে হয়। মানুষ বাড়িঘর বানিয়ে সমাজবদ্ধভাবে/গোষ্ঠীবদ্ধভাবে/সম্মিলিতভাবে বাস করে। কিন্তু এই বেঁচে থাকা বা টিকে থাকার বাইরেও তাকে ভাবতে হয় সমাজের/সভ্যতার উন্নতির বিষয়ে ব্যাপারে। মানুষ তার জান/প্রজ্ঞা দিয়ে এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে/পানে। এই অগ্রসরতা আগামীর ভবিষ্যতের পৃথিবীকে/দুনিয়াকে সহজতর/সুন্দর করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস ধারণা।
প্রতিশব্দ শিখি
প্রায় একইরকম অর্থযুক্ত পরস্পর প্রতিস্থাপনযোগ্য শব্দকে প্রতিশব্দ বলে। নিচে কিছু শব্দের কয়েকটি করে প্রতিশব্দ দেওয়া হলো।
কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবেও পরিচিত। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যের মধ্যে আছে 'অগ্নি-বীণা', 'বিষের বাঁশী', 'ভাঙার গান', 'সাম্যবাদী', 'দোলনচাঁপা' ইত্যাদি। তাঁর লেখা উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের মধ্যে আছে 'বাঁধন-হারা', 'মৃত্যুক্ষুধা', 'শিউলিমালা' ইত্যাদি। তাঁর লেখা প্রবন্ধের বই 'যুগবাণী', 'দুর্দিনের যাত্রী', 'রুদ্রমঙ্গল' ইত্যাদি।
নিচের কবিতাটি কবির 'সর্বহারা' কাব্য থেকে নেওয়া হয়েছে। কবিতাটি গদ্যে রূপান্তর করো। গদ্যে রূপান্তরের সময়ে কবিতায় ব্যবহৃত শব্দের বদলে যত বেশি সম্ভব প্রতিশব্দ বসানোর চেষ্টা করো। শব্দের অর্থ বোঝার জন্য এবং প্রতিশব্দ খোঁজার জন্য প্রয়োজনে অভিধানের সহায়তা নাও।
কাজী নজরুল ইসলাম
১
দুর্গম গিরি কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হাঁশিয়ার।
দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মত?
কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।
এ তুফান ভারি, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরি পার।
২
তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান।
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
ফেনাইয়া ওঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে, নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার
৩
অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ, কান্ডারি!
আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তিপণ। "হিন্দু না ওরা মুসলিম?"
ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? কান্ডারি! বলো ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা-রা
৪
গিরি-সংকট, ভীরু যাত্রীরা, গুরু গরজায় বাজ,
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ। কান্ডারি!
তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াহু যে মহাভার।
৫
কান্ডারি! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
বাঙালির খুনে লাল হলো যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর
উদিবে সে রবি আমাদেরই খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।
৬
ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান,
আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান?
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ?
দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, কান্ডারি হাঁশয়ার!
ইসমাইল হোসেন সিরাজী (১৮৮০-১৯৩১) একজন কবি, ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে 'অনল-প্রবাহ', 'রায়নন্দিনী', 'তারাবাঈ', 'স্ত্রীশিক্ষা' ইত্যাদি। নিচে ইসমাইল হোসেন সিরাজীর একটি কবিতা দেওয়া হলো। কবিতায় যেসব শব্দের নিচে দাগ দেওয়া আছে, সেগুলোর বিপরীত শব্দ লেখো।
ইসমাইল হোসেন সিরাজী
হউক সে মহাজ্ঞানী মহা ধনবান,
অসীম ক্ষমতা তার অতুল সম্মান,
হউক বিভব তার সম সিন্ধু জল
হউক প্রতিভা তার অক্ষুন্ন উচ্ছল
হউক তাহার বাস রম্য হ্য মাঝে
থাকুক সে মণিময় মহামূল্য সাজে
হউক তাহার রূপ চন্দ্রের উপম
হউক বীরেন্দ্র সেই যেন সে রোস্তম
শত শত দাস তার সেবুক চরণ
করুক স্তাবক দল স্তব সংকীর্তন।
কিন্তু যে সাধেনি কতু জন্মভূমি হিত
স্বজাতির সেবা যেবা করেনি কিঞ্চিৎ
জানাও সে নরাধমে জানাও সত্তর,
অতীব ঘৃণিত সেই পাষন্ড বর্বর।
বিপরীত শব্দ
যেসব শব্দ পরস্পর বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে, সেগুলোকে বিপরীত শব্দ বলে। বিপরীত শব্দ একে অন্যের
পরিপূরক। যেমন-জীবিত-মৃত, গভীর-অগভীর, স্থির-গতিশীল ইত্যাদি। এসব শব্দযুগলের একটি বৈশিষ্ট্য
হলো, এগুলোর একটিকে অস্বীকার করার মানে অন্যটিকে স্বীকার করে নেওয়া। যদি কারো সম্পর্কে বলা হয়
তিনি 'জীবিত', তবে বোঝায় যে তিনি 'মৃত' নন। আবার যদি বলা হয় তিনি 'মৃত', তবে বোঝায় তিনি
'জীবিত' নন।
শব্দের পূর্বে অ, অনু, অনা, অপ, অব, অবি, দুর, না, নি, নির্ প্রভৃতি উপসর্গ যুক্ত করে বিপরীত শব্দ তৈরি করা
যায়। যেমন-চেনা থেকে অচেনা, আদর থেকে অনাদর, নশ্বর থেকে অবিনশ্বর। তবে এমন বহু শব্দ রয়েছে
যেগুলোর বিপরীত শব্দ গঠনগতভাবে আলাদা। যেমন-ধনী-গরিব, আদি-অন্ত, নিন্দা-প্রশংসা ইত্যাদি।
বিবৃতিবাচক বাক্য দুই ধরনের: হ্যাঁ-বাচক ও না-বাচক। নিচের অনুচ্ছেদের হ্যাঁ-বাচক বাক্যগুলোকে না-বাচক বাক্যে এবং না-বাচক বাক্যগুলোকে হ্যাঁ-বাচক বাক্যে রূপান্তর করো। এই কাজের জন্য শব্দের বদলে বিপরীত শব্দ বসানোর প্রয়োজন হতে পারে।
লোকটি প্রবাসী। কিছু দিন আগে তিনি বিদেশে এসেছেন। এখানে আসার পর বেশিরভাগ সময়ে তাঁর মন খারাপ থাকে। মা-বাবার কথা মনে পড়ে। বাংলাদেশে কত অলসতায় সময় কাটিয়েছেন। কিন্তু এখন তাঁকে সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। বছর দুয়েক পর দেশে যাবেন। নিশ্চয় ততদিনে তাঁর ছোটো ভাইবোনগুলো ছোটো থাকবে না। তবু তাদের জন্য তিনি হাতে করে কিছু নিয়ে যাবেন।